আমাদের মস্তিষ্ক তার ওজনের মাত্র ২% হলেও, শরীরের মোট শক্তির প্রায় ২০% ব্যবহার করে? এই ক্ষুদ্র অঙ্গটি একটি সুপারকম্পিউটারের চেয়েও শক্তিশালী, যা প্রতি মুহূর্তে বিলিয়ন বিলিয়ন ডেটা হ্যান্ডেল করছে। স্বপ্ন দেখছেন, ভাবছেন, শিখছেন—সবই এই মস্তিষ্কের কারসাজি।
স্বপ্ন! এর চেয়ে জাদুকরী আর কী হতে পারে? দিনের বেলায় যা কিছু চোখে দেখি, যা কিছু অনুভব করি, রাতে আমাদের মস্তিষ্ক সেগুলোকে নতুন করে সাজিয়ে তোলে, নতুন গল্প তৈরি করে। এই গল্পের চরিত্রগুলো অচেনা হতে পারে, আবার পরিচিতও। স্থানকালপাত্রের কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। এমন সব অদ্ভুত ঘটনা ঘটে যা বাস্তবে অকল্পনীয়। কোনো কোনো বিজ্ঞানীর ধারণা, স্বপ্ন দেখা মস্তিষ্কের এক ধরনের 'ডেটা ক্লিনিং' প্রক্রিয়া, যেখানে অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি মুছে ফেলা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিগুলোকে পাকাপোক্ত করা হয়। আবার কেউ কেউ বলেন, স্বপ্ন দেখা ভবিষ্যতের পূর্বাভাস, অথবা আমাদের অবচেতন মনের গভীরতম ইচ্ছাগুলোর প্রতিফলন। কিন্তু আমার মনে হয়, স্বপ্ন হলো আমাদের মস্তিষ্কের নিজস্ব সিনেমা। যেখানে আমরাই লেখক, পরিচালক, অভিনেতা, আবার দর্শকও।
আপনি কি জানেন, পৃথিবীর প্রায় ৬০% মানুষ নিয়মিত রঙিন স্বপ্ন দেখে? আর বাকি ৪০% মানুষ দেখে সাদা-কালো স্বপ্ন, বা এমন স্বপ্ন যার রঙ তারা মনে রাখতে পারে না। অদ্ভুত ব্যাপার, তাই না? যারা ছোটবেলা থেকে সাদা-কালো টেলিভিশন দেখে বড় হয়েছে, তাদের রঙিন স্বপ্ন দেখার প্রবণতা কম থাকে বলে একটি গবেষণা দেখায়। প্রযুক্তির প্রভাব কীভাবে আমাদের সবচেয়ে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাগুলোকেও পাল্টে দিতে পারে, ভাবুন একবার! এই স্বপ্নগুলোতেই আমাদের মন সবচেয়ে স্বাধীন থাকে, সব রকম বিধিনিষেধের ঊর্ধ্বে উঠে যেতে পারে। মহাকর্ষের টান নেই, যুক্তির শৃঙ্খল নেই, এমনকি সময়ের ধারণাও সেখানে ভেঙেচুরে যায়। ঠিক যেমন মহাবিশ্বের এক বিশাল রহস্যময় কৃষ্ণগহ্বর, যা সব আলো শোষণ করে নেয়, কিন্তু তার ভেতরে কী আছে, তা কেউ জানে না।
