আমরা ভাবি নিউজ দেখলে আমরা "আপডেটেড" থাকি, "জ্ঞানী" হই। আসলে যা হয়, তা হলো চব্বিশ ঘণ্টার একটা মানসিক অত্যাচার। নিউজ চ্যানেল বা পোর্টালগুলো আমাদের খবর দেয় না, ওরা আমাদের কাছে ভয়, রাগ আর হতাশা বিক্রি করে। কেন এই আবর্জনা দেখা এখনই বন্ধ করা উচিত তা নিয়ে কিছু কথা বলবো।
"ব্রেকিং নিউজ!" "এইমাত্র পাওয়া!" "দেশের পরিস্থিতি ভয়াবহ!" এইসব শুনে আপনার কেমন লাগে? বুক ধড়ফড় করে, তাইনা? আপনি ভাবেন, হায় হায় সর্বনাশ হয়ে গেলো। ঠিক এইটাই ওরা চায়। ভয় আর অ্যাংজাইটি হলো ওদের ব্যবসার মূলধন। আপনাকে যত বেশি ভয় দেখানো যাবে, আপনি তত বেশি ওদের চ্যানেল আঁকড়ে ধরে থাকবেন। করোনার সময় নিউজগুলোর কথা মনে আছে? সারাদিন আমরা টিভিতে এসব নিউজ দেখতাম আর তাদের ব্যবসা ভালোই চলতো। এগুলো খবর না, এটা আমাদেরকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে রাখার একটা সিস্টেম।
সারাদিন শুধু খুন, ধর্ষণ, দুর্নীতি, যুদ্ধ আর দুর্যোগের খবর। দুনিয়ায় ভালো কিছু কি ঘটে না? অবশ্যই ঘটে। কিন্তু ভালো খবরে 'মশলা' নেই, সেটা বিক্রি হয় না। আর কোনোদিন যদি কোনো খারাপ কিছু না ঘটে, সেদিন সম্পাদকের ঘুম ই হারাম হয়ে যায়। আনাচে কানাচে থেকে খারাপ সংবাদ কালেক্ট করার জন্যে মরিয়া হয়ে ওঠে। এভাবে একটানা শুধু খারাপ খবর গিলতে থাকলে আপনার দুনিয়া দেখার চোখটাই নষ্ট হয়ে যাবে। আপনার মনে হবে পৃথিবী একটা জাহান্নাম আর সব মানুষ শয়তান। এই মানসিকতা নিয়ে আপনি নিজের জীবনে ভালো কিছু করবেন কীভাবে?
দিনে দুই ঘণ্টা নিউজ দেখে আপনি আসলে কী পান? বেশিরভাগ খবরই আপনার জীবনের ওপর কোনো সরাসরি প্রভাব ফেলে না। কোন মন্ত্রী কী বললো, বা কোন দেশে কী হলো, বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম আবারো হারলো, সেটা জেনে আপনি কী করবেন? ওই সময়টা আপনি ঘুমাইতে পারতেন, একটা ভালো বই পড়তে পারতেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারতেন, বা স্রেফ চুপচাপ বসে থাকতে পারতেন, তাতেও আপনার লাভ বেশি হতো।
আপনি ভাবছেন আপনি "সত্য" ঘটনা দেখছেন? একদম ভুল। প্রত্যেকটা মিডিয়া হাউসের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। ওরা আপনাকে খবরের একটা নির্দিষ্ট অংশ দেখায়, যেটা ওদের সুবিধা। ওরা চায় আপনি একটা নির্দিষ্ট পক্ষ নেন, আরেকটা পক্ষকে ঘৃণা করেন। নিউজ আপনাকে বিভক্ত করে, রাগী করে তোলে। এটা কোনো জ্ঞানার্জন না, এটা এক মগজ ধোলাই।
নিউজ দেখা বন্ধ করা মানে গাধা হয়ে যাওয়া না। এর মানে হলো নিজের মানসিক শান্তির কন্ট্রোল নিজের হাতে নেওয়া। দরকারি খবর আপনার কাছে এমনি এমনিই পৌঁছাবে। বন্ধু, পরিবার বা অন্য কোনো মাধ্যমে। কিন্তু এই চব্বিশ ঘণ্টার টক্সিক সার্কাস থেকে বের হয়ে আসুন। দেখবেন, পৃথিবীটাকে অনেক বেশি শান্ত আর সুন্দর লাগছে। মাথাটা পরিষ্কার থাকবে, আর আপনি নিজের জীবনে ফোকাস করতে পারবেন।
