একদিন সবাই মরে যাবো


একটা সময় ছিল মানুষ জমি কেনার জন্য মরিয়া ছিল। আজকে মানুষ তথ্য কিনে নিচ্ছে। ডেটা, ইনফ্লুয়েন্স, মডেল, ফলোয়ার- কে কত বেশি বানাতে পারে, কে কত উন্নত কিছু তৈরি করতে পারে-  এই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত সবাই।


তথ্যই এখন সবচেয়ে দামি সম্পদ। যার কাছে বেশি তথ্য, সে বেশি ক্ষমতাবান। AI ট্রেনিং, সার্চ হিস্টোরি, ইউজার বিহেভিয়ার- সবকিছু এখন টাকার সমতুল্য হয়ে গেছে।


এই তথ্যদৌড়ের ভেতর কেউ থেমে বলে না- “এই জিনিসটা নিয়ে এত ভাবছি কেন?” “আমি তো একদিন মরে যাব।”


কেউ কথোপকথনের মাঝখানে বলে না-  “আচ্ছা, চল এই সিরিয়াস ভাবনাগুলো একটু কমাই, কারণ সবকিছুরই তো শেষ আছে, আমরাও থাকবো না।”


কারণ কেউ ভাবতে চায় না মৃত্যুকে। সবাই ভাবে, মৃত্যু কেমন যেন একটা ভাঙা বিষয়। একটু অশুভ। চিন্তা থেকে বাতিল করে দেয়ার মতো। কিন্তু তবুও, সবাই একদিন সেখানে গিয়েই থামবে।


আমি মাঝে মাঝে মানুষের সাথে কথা বলার সময় তাদের চেহারার মধ্যেই দেখি শেষটা। তাদের নাকের মধ্যে তুলা, নিঃসাড় মুখ, একটা কাঠের খাটিয়ায় নিথর পড়ে আছে- ঠিক সেভাবেই আমি কল্পনা করি।


এই মানুষটাও একদিন মরে যাবে। ওর অফিস থাকবে না, ফোন বাজবে না, ডেটা-অ্যানালিটিক্স, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লায়েন্ট- সব থেমে যাবে। শুধু থাকবে একটা শরীর, যার ঠান্ডা হয়ে যাওয়াকে ঘিরে দু’একটা মানুষের কান্না।


Sam Altman-ও একদিন মরে যাবে। OpenAI, GPT-10, AGI- সব কিছু একদিন পুরোনো হয়ে যাবে। এই দুনিয়ার প্রতিটা শিখর, একদিন মাটির নিচে মিশে যাবে।


এটাই সবচেয়ে সুন্দর গণতান্ত্রিক সত্য। মৃত্যু- যেখানে সবাই সমান। কেউ বাদ যাবে না। কেউ ছাড় পাবে না। কেউ বেশি খাটিয়া পাবে না। তুমি, আমি, সে- সবার জন্য একটা মাটি, একটা কাফন, আর কিছু নীরবতা।


কিন্তু এই মহাসত্য সামনে রেখেও মানুষ কত সিরিয়াস হয়ে পড়ে এই জীবন নিয়ে! তারা ভাবে, এইখানেই সব। তারা যুদ্ধ করে, প্রতিযোগিতা করে, র‍্যাঙ্ক চায়, নিজেকে প্রমাণ করতে চায় একে অন্যের চেয়ে বড়ো।


আর আল্লাহ এই নিয়েই সূরা তাকাসুরে বললেন- “আলহাকুমুত্ তাকাসুর।” তোমাদের ব্যস্ত রেখেছে প্রতিযোগিতা।


এই প্রতিযোগিতা কিসের? আর কতদূর যাবে এটা? শেষ কোথায়? কে মনে রাখবে, তুমি কত বড়ো AI বানিয়েছিলে, কতজন তোমার পোস্টে রিয়্যাক্ট দিয়েছিল?


এইসব প্রশ্নই আমরা এড়িয়ে যাই, কারণ উত্তর জানলে তো আর খেলাটা চলবে না। আমরা মুখ ঘুরিয়ে নেই, কারণ মৃত্যুর দিকে তাকানো মানে নিজের মুখোমুখি হওয়া।


কিন্তু আমি মুখ ফিরিয়ে নেই না। আমি চুপ করে দেখি- সামনে যে দাঁড়িয়ে কথা বলছে, সে আর কিছুদিন পরই চলে যাবে। যেভাবে আমিও যাব। এই কথা মনে পড়লেই, জীবন ধীর হয়ে আসে। কথা কমে যায়। ভেতরটা গভীর হয়ে ওঠে।


আমার মনে হয়- যদি আমরা সবাই বুঝতাম যে আমরা একেকজন অস্থায়ী অতিথি, তাহলে হয়তো পৃথিবীটা একটু বেশি নরম হতো। মানুষ একটু কম তাড়াহুড়া করতো। আর হয়তো আমরা সত্যিকার অর্থেই বুঝতাম- এই দুনিয়ার গুরুত্ব আসলে কতটা কম।

 

Previous Post Next Post