কেন আমরা বারবার অনুপস্থিত থেকে যাই নিজেদের জীবনে?


একটা বিকেল আসে। জানালার ফাঁকে রোদ ঢোকে। বাতাসে পাতার শব্দ বাজে। দূরে আজানের সুর। চারপাশ নিঃশব্দ। সব কিছু নিখুঁতভাবে জায়গামতো আছে।
কিন্তু আমি?
আমি নেই।

আমার মন তখন অন্য কোথাও। হয়তো গতকালের কোনো ভুল সিদ্ধান্তে, হয়তো আগামীকালের কোনো দুশ্চিন্তায়, হয়তো এমন কোনো প্রশ্নে যার উত্তর আমার নিয়ন্ত্রণেই নেই।
এই মুহূর্তে আমি নেই।
আমি আমার জীবনে অনুপস্থিত।

এই অনুপস্থিতি একটা ব্যাধির মতো। চোখ খোলা, কিন্তু দেখি না।
কান খোলা, কিন্তু শুনি না।
হৃদয় খোলা, কিন্তু অনুভব করি না।

প্রতিদিন আমরা নানা কাজ করি, কথোপকথন চালাই, হেসে উঠি, কিছু শেখার ভান করি।
কিন্তু আমাদের মন যেন আরেকটি বাস্তবতায় বসবাস করছে- একটি ছায়াময় ভবিষ্যত অথবা অতীতের কোনো অতৃপ্ত স্মৃতি।

আমরা কিভাবে নিজেদের জীবনে উপস্থিত হতে পারি?

এই প্রশ্নটা একদিন ধাক্কা মারে- শুধু তখন, যখন আমরা চরম এক নিঃসঙ্গ মুহূর্তে পৌঁছাই। যখন প্রিয় মানুষ চোখের সামনে থেকেও দূরের হয়ে যায়।
তখন হঠাৎ বুঝি, আমরা কখনো আসলেই উপস্থিত ছিলাম না।
ছিল না আসল দেখা, আসল অনুভব, আসল উপস্থিতি।

আল্লাহ আমাদের প্রতি মুহূর্তেই ডাকছেন।
তিনি আমাদের জীবনের ভেতরেই থাকেন- আমাদের নিঃশ্বাসে, আমাদের দৃষ্টিতে, আমাদের চুপচাপ বসে থাকায়।

কিন্তু আমরা সেই বাস্তবতা থেকে পালিয়ে বেড়াই।
আমরা ভাবি, কিছু একটা ঘটবে- তারপর আমি ‘ফিরে আসবো’।
কিন্তু জীবন কখনো অপেক্ষা করে না।

আমাদের আসতে হয়। এই এখন-এইখানে-এইমুহূর্তে।

নিজের জীবনে ফিরে আসা মানে কেবল চোখ মেলে থাকা নয়, বরং চোখের ভেতর দিয়ে ‘দেখতে শেখা’।
শব্দ শোনার নয়, বরং অর্থ ধরার মতো মন থাকা।

যে মানুষ নিজ জীবনে অনুপস্থিত- সে অন্য কারো জীবনে কখনোই উপস্থিত হতে পারে না।

তাই চল, একটু থেমে যাই। একটু শুনি বাতাসের শব্দ, অনুভব করি হৃদয়ের স্পন্দন।
এই এখন- এই তো আমার জীবন।
আর আমি এখানে- জাগ্রত, অনুভবী, উপস্থিত।
Previous Post Next Post