ঘুম এবং মৃত্যু- দুটি শব্দের মাঝে অদ্ভুত মিল রয়েছে। প্রতিটি ঘুম একধরনের মৃত্যু। আল্লাহ বলছেন- "আল্লাহ মৃত্যু ঘটান রাত্রিকালে, যাদের তিনি মৃত্যু দেন না, তাদের আত্মা ফিরিয়ে দেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত..." (সূরা যুমার ৪২) অর্থাৎ প্রতিরাতেই আমরা এক মৃত্যুতে ঢুকি।
ঘুমে আমরা প্রথমবার ‘নিঃশব্দ’র অভিজ্ঞতা পাই, যখন সারা দেহকে ঢেকে নেয় অন্ধকার। মৃত্যুর আগে শারীরিক চঞ্চলতা থমকে যায়, হৃদপিণ্ডে থরথরানি চলে আসে; ঘুমেও শরীর অকর্মণ্য, মন স্বপ্নেল ভ্রমণে নিমজ্জিত।
ঘুম এমন এক গভীর আত্মসমর্পণ যেখানে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না। আমরা জানি না ঘুমের ঠিক কোন মুহূর্তে আমরা হারিয়ে যাব। ঠিক যেভাবে আমরা জানি না মৃত্যুর আগমন কোন নিশব্দ রাতে এসে দাঁড়াবে আমাদের পাশে।
স্বপ্নের মধ্য দিয়ে নীরব অন্তর্জগতের সঙ্গে সংযোগ। কখনো আমরা স্বপ্নে হাসি, কখনো কান্না, কখনো ভয়। সবই যেন জীবনের অন্য আরেক ছায়া। ঘুম আমাদের শেখায়- ছোট্ট মাটির এক কোণে কীভাবে বিশাল অন্তর স্থাপন করতে হয়।
জেগে ওঠা নতুন জীবন। না জাগা- মৃত্যু। আর ঘুম থেকে জাগার সেই মুহূর্ত- নতুন দিনের প্রথম আলো মুখে ফুটে উঠার ক্ষণ- হয়ে যায় এক নতুন জেগে ওঠা। যদি কেউ ঘুম থেকে উঠে বলে- "আলহামদুলিল্লাহিল্লাযী আহইয়ানী..." তবে সে জানে, সে এক মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছে। সে জানে, এই সকালটা শুধু আরেকটি ‘দিন’ নয়- এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক নতুন সুযোগ।
ঘুম আমাদের স্মরণ করায়- আমরা কতটা অসহায়, কতটা নির্ভরশীল, কতটা ক্ষণিক। ঘুম আমাদের বলে- চোখ বন্ধ করো, সব ছেড়ে দাও, বিশ্বাস করো এবং ক্ষণিকের জন্যে সবাইকে রেখে হারিয়ে যাও। আর আল্লাহ আমাদের বলেন- "তুমি আমায় ছেড়ে কোথায় যাবে?"
