সময়কে আমরা প্রতিদিন দেখি- ঘড়ির কাঁটায়, রুটিনে, ক্লাসে, নামাজে, সূর্যোদয়ে। কিন্তু এসবের বাইরেও কি সময় আছে? সময় কি শুধুই একেকটি মুহূর্তের পর মুহূর্ত চলে যাওয়া? নাকি সময় আসলে একটি অনুভব, একটি স্নায়বিক বোধ, যা কেবল সেই অনুভূতিমান হৃদয়ের মাঝে সক্রিয় হয়ে ওঠে- যে হৃদয় 'থেমে' তাকিয়ে দেখে, উপলব্ধি করে, মুগ্ধ হয়?
আমরা যখন ব্যস্ত, সময় ছোট হয়ে আসে। আবার কোনো গভীর মুহূর্তে, যেমন- প্রিয় মানুষের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকা, অথবা নামাজের সিজদায় জমে থাকা কান্নার মাঝে, তখন সময় থেমে থাকে। সময় সেখানে যেন প্রবাহ নয়, বরং একটি স্তর- একটি স্তব্ধতা- যার ভেতরে আমরা নেমে যেতে পারি, যদি আমরা চাই।
শরীর সময় বোঝে না, ঘড়ি সময় ধরে রাখে না। সময় ধরা পড়ে আমাদের মনোযোগে। আমাদের অনুভবে। একটা শিশুর কাছে দুপুর এক অনন্ত বিস্তার। আর এক ক্লান্ত কর্মীর কাছে সেই দুপুর কেবল চায়ের অপেক্ষা। কার অনুভবে সময় প্রকট হয়ে উঠছে, কে কেবল বয়ে চলেছে সময়ের সঙ্গে- এই দুইয়ের মধ্যে এক অদ্ভুত ফারাক। আর এই ফারাকেই লুকিয়ে আছে সময়ের গভীরতা।
সময়কে যন্ত্রণা করে তোলে দুশ্চিন্তা। আর অনুভবকে করে তোলে ধ্যান। সময় তখনো চলে, কিন্তু আমরা থাকি ভেতরে, তার গভীরে। অনুভবহীন সময় আসলে এক ধরনের মৃত্যু। আর অনুভবের ভেতরে যে সময়, তা হয় জীবনের সবচেয়ে জীবন্ত মুহূর্ত।
আমরা যদি সময়ের স্তরে নামতে চাই, তাহলে আমাদের মনকে 'ঘড়ির মতো' হওয়া থেকে 'গভীর নদীর মতো' হতে হবে। আমাদের প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি দৃষ্টি, প্রতিটি নীরবতা- হোক সেই সময়ের একটি স্পর্শ। যেন সময় আর আমাদের আলাদা কিছু নয়। যেন সময় মানে আমি- আর আমি মানে এই মুহূর্তের গভীরতা।
