নীরবতা যেখানে শব্দের চেয়ে গভীর হয়


একটা সময় ছিল, যখন শব্দ দিয়েই সবকিছু বোঝাতে চাইতাম। অনুভব, কষ্ট, ভালোবাসা- সবকিছুকে শব্দে বেঁধে ফেলতে চাইতাম। কিন্তু একদিন হঠাৎ চুপ করে গেলাম। আর তখনই আমি প্রথম বুঝতে পারলাম- সব শব্দ বোঝায় না, আর সব আন্ডারস্ট্যান্ডিং শব্দ দিয়ে হয় না।


নীরবতা কি তবে ফাঁকা কিছু? না, বরং শব্দের পরে যে স্তব্ধতা আসে, সেইটুকু হয় সবচেয়ে অর্থপূর্ণ। যেমন- একটি আযান শেষে যে নিঃশব্দতা নেমে আসে, সেটি কেবল শব্দহীনতা নয়। সেটি এক অনুভবের মঞ্চ- যেখানে আল্লাহর ডাকে হৃদয় সাড়া দেয়, নীরবে। আমরা শুনি না, কিন্তু বুঝি।


শব্দ অনেক সময় চাপ দেয়, বোঝায়, ব্যাখ্যা চায়। কিন্তু নীরবতা? সে কিছুই বলে না, তবুও বলে। আমরা কারো সঙ্গে চুপ করে বসে থাকতে পারি যদি তাকে ভালোবাসি। আমরা আল্লাহর সামনে কিছু না বলেও কেঁদে ফেলতে পারি যদি আমাদের ঈমান জীবন্ত হয়। একটা ফাঁকা পৃষ্ঠা, কিন্তু তা অনেক কথা বলে। 


এই নীরবতাই তো আসল ভাষা। শব্দ কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ে, নকল হয়ে যায়। কিন্তু সত্যিকারের অনুভব সবসময় নীরব হয়। যেমন- আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা, কোনো পুরোনো চিঠি হাতে ধরে রাখা, হঠাৎ প্রিয় কারো কথা মনে পড়ে যাওয়ার সেই স্তব্ধ মুহূর্ত।


নীরবতা আমাদের একান্ত ঘর। শব্দের জগতে আমরা পরস্পরকে ব্যাখ্যা করি, আর নীরবতার জগতে আমরা একে অপরকে অনুভব করি। আর তাই, যে জায়গায় নীরবতা শব্দের চেয়ে গভীর হয়ে ওঠে- সেই জায়গা হয় পবিত্র। সেই জায়গায় প্রেম হয় প্রকৃত। দোয়া হয় অন্তর থেকে। আর মানুষ হয় মানুষের মতো- ভঙ্গুর, নরম, সৎ।


আজকাল আমরা এত শব্দে ডুবে আছি যে নীরবতার সৌন্দর্য ভুলে গেছি। কিন্তু যে কেউ চাইলে ফিরে যেতে পারে- নিজের মধ্যে, আল্লাহর দিকে, এক নিঃশব্দ অথচ গভীর যাত্রায়।

Previous Post Next Post