জীবন কখনো সহজ ছিল না। কখনোই হবে না। মানুষের মুখে কিছু না কিছু থাকবে- সমালোচনা, ভুল ব্যাখ্যা, অভিযোগ। তারা তোমার ভালোতেও ভুল খুঁজবে, আবার তোমার খারাপেও আনন্দ পাবে। এর মাঝেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় এক অদ্ভুত নীরবতার ভেতর, যেটার নাম ধৈর্য। ধৈর্য মানে কেবল অপেক্ষা নয়- বরং একটা অভ্যন্তরীণ শক্তি, যেখানে তুমি আল্লাহর উপর ভরসা করো, নিজের শান্তিকে অক্ষুণ্ণ রাখো।
আমরা ভুল করি। প্রতিদিনই করি। অনেক পাপ এমনভাবে ঢুকে পড়ে, আমরা বুঝতেও পারি না- একটা দৃষ্টি, একটা শব্দ, একটুখানি গাফেলতি। কিন্তু তাই বলে কি আমরা ফিরে যেতে পারি না? পারি। বরং ফিরে যাওয়াটাই আল্লাহর প্রিয়। ছোট পাপকেও ছোট করে দেখা উচিত নয়, কারণ ছোটদের দিয়েই তো দেয়াল তৈরি হয়। হৃদয়ের দেয়ালে যেন পাপের ইট না জমে, সে জন্যই দরকার- নিরলস ক্ষমা প্রার্থনা, আন্তরিকভাবে।
এই দুনিয়াটা এক অস্থায়ী বিশ্রামঘর। এখানকার আলো, সম্মান, টাকা- সবই সময়ের। যাকে আজ সবাই মনে রাখে, কাল তার নামও মুছে যায়। তাই দুনিয়ার মোহকে হৃদয়ের ভেতর জায়গা দেওয়া উচিত নয়। আমরা যেন যাত্রী হ- —যার চোখ গন্তব্যে, পথের সাজে নয়। যেটুকু দরকার, ততটুকু থাকুক; বাকি সব ভার হয়ে পড়ে।
তবুও আমরা কষ্ট পাই। কখনো নিজের কারণে, কখনো অন্যের কারণে। হতাশা যেন ধীরে ধীরে মনকে বিষিয়ে তোলে, আত্মাকে ক্লান্ত করে। তখন মনে হয়, কিছুই ঠিক হবে না। কিন্তু সেই মুহূর্তেই দরজা খুলে দিতে হয়- আল্লাহর দিকে। তিনি জানেন, আমরা জানি না। তাঁর পরিকল্পনা গভীর, অথচ কোমল। তিনি কাঁদতে থাকা হৃদয়ের শব্দ শুনতে পারেন।
কিন্তু আমাদের হৃদয় তো বোঝা ধরে রাখে। কেউ কষ্ট দিয়েছে, কেউ অবহেলা করেছে। প্রতিশোধ না নিলেও সেই কষ্ট বুকের ভেতরে রয়ে যায়। ক্ষমা যেন সেই বোঝাটা নামিয়ে রাখার নাম। অন্যকে ক্ষমা মানে নিজেকে মুক্ত করা। যেন প্রতিদিন ঘুমাতে যাওয়ার আগে আত্মাকে ধুয়ে নেওয়া। যে ক্ষমা করতে পারে, সে একান্তই শক্তিশালী।
তবে সেই শক্তিও আসে আন্তরিকতা থেকে। তুমি কী করো, তার চেয়েও বড় প্রশ্ন: কেন করো? যদি তা আল্লাহর জন্য হয়, তাহলে সবই অর্থপূর্ণ। কিন্তু যদি মানুষের চোখের জন্য হয়, তাহলে সবই ফাঁকা। হৃদয় যেন এক আয়না- অহংকার আর ঈর্ষা তাকে ধোঁয়ায় ঢেকে দেয়। সেসব দূর করে যখন তুমি অন্যদের ভালো চাও, তখনই আল্লাহ তোমার পাশে থাকেন।
