ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা সম্ভবত বর্তমানের চেয়ে অনেক বেশি ব্যক্তিগত এবং অভিযোজিত (adaptive) হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর শেখার গতি, আগ্রহ এবং ক্ষমতা ভিন্ন। এআই-এর সাহায্যে, একজন শিক্ষার্থী তার নিজের গতি অনুযায়ী শিখতে পারবে। এআই-চালিত প্ল্যাটফর্মগুলো শিক্ষার্থীর দুর্বলতা চিহ্নিত করে সেই অনুযায়ী শেখার উপকরণ সরবরাহ করবে। এতে করে, শেখার প্রক্রিয়াটি আরও কার্যকরী এবং ফলপ্রসূ হবে।
এই নতুন ব্যবস্থায় শিক্ষকের ভূমিকা পরিবর্তন হবে। শিক্ষক আর কেবল তথ্যের সরবরাহকারী থাকবেন না। কারণ, যেকোনো তথ্য এআই-এর মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে পাওয়া যাবে। শিক্ষকের মূল কাজ হবে একজন মেন্টর, ফ্যাসিলিটেটর এবং গাইড হিসেবে কাজ করা। তারা শিক্ষার্থীদের শেখাবে কীভাবে এআই-এর মতো শক্তিশালী টুল ব্যবহার করে জটিল সমস্যা সমাধান করতে হয়, সৃজনশীলভাবে চিন্তা করতে হয় এবং নতুন কিছু তৈরি করতে হয়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন শিক্ষক একটি ইতিহাস ক্লাসে এআই ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের একটি ঐতিহাসিক ঘটনার বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করতে বলতে পারেন। এআই দ্রুত সব ডেটা সংগ্রহ করবে, কিন্তু সেই ডেটা বিশ্লেষণ করে একটি অর্থপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো এবং যুক্তিসঙ্গতভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করার কাজটি শিক্ষার্থীরা করবে। আর এই পুরো প্রক্রিয়ায় শিক্ষক একজন পথপ্রদর্শকের ভূমিকা পালন করবেন।
এছাড়াও, শিক্ষকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে নৈতিকতা, সহানুভূতি এবং মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা। এআই ডেটা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে পারলেও, মানুষের আবেগ, নৈতিকতা এবং সৃজনশীলতা বোঝার ক্ষমতা তার নেই। আর এখানেই একজন মানুষের প্রয়োজন, যিনি শিক্ষার্থীদের শেখাবেন মানবিকতার গুরুত্ব।
ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা হবে মানুষ এবং এআই-এর এক দারুণ সহাবস্থান। এআই দেবে দক্ষতা এবং ডেটা, আর শিক্ষক দেবে জ্ঞান, মানবিকতা এবং দিকনির্দেশনা। এই দুইয়ের সমন্বয় একটি উন্নত ও কার্যকরী শিক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করবে, যা শিক্ষার্থীদের শুধু ভালো চাকরি পেতে নয়, বরং একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে।
